প্রায় সিকি শতাব্দী আগে লর্ডসের মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ঘিরে বাঙালির আবেগের যে অদ্ভুত ফানুস ভাসতে শুরু করেছিল, বলা চলে তার যাত্রা শেষ হলো লর্ডসের মাঠেই, ঝুলন গোস্বামী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
পুরুষ বিভাগে ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় দলে খেলার প্রসঙ্গে পঙ্কজ রায়ের পরে যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণ হয় সৌরভের আবির্ভাবে এবং তারপর থেকে সৌরভের সঙ্গেই বিচ্ছিন্ন ভাবে খেলে গেছেন সাবা করিম, লক্ষ্মী, দেবাং, দীপ দাশগুপ্তরা, দলে ডাক পেলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি শিবশঙ্কর পাল, রণদেব বসু। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে ঋদ্ধিমান সাহা এবং মহম্মদ শামি (এর মধ্যে দিন্দা, মনোজও খেলেছেন), শেষজন এখনও কয়েকবছর খেলবেন। অন্যদিকে সৌরভ কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকাকালীনই আবির্ভাব ঘটে ঝুলন গোস্বামীর, এক্ষেত্রেও তিনি গার্গী ব্যানার্জী, মিঠু মুখার্জীর পরের বাঙালি মহিলা ক্রিকেটার যিনি ধারাবাহিক ভাবে ভারতের হয়ে খেললেন। সৌরভের মতো একই রকমভাবে ঝুলনের সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে খেলে গেছেন রুমেলী ধর, প্রিয়াঙ্কা রায়, অর্চনা দাস-রা। কিন্তু এরপর?
প্রায় ২৬/২৭ বছরের স্বপ্নের দৌড় কি এবার থামতে চলেছে? রিচা ঘোষ মাঝে মধ্যেই সুযোগ পাচ্ছেন কিন্তু এখনও নিজেকে দলে অপরিহার্য প্রমান করতে পারেননি, তিতাস সাধু, ঋষিতা বসুরা কতটা এগোতে পারবেন সেটা সময়ই বলবে। শামি নিঃসন্দেহে বড় কোন চোট না পেলে এখনও বছর তিনেক খেলবেন। একমাত্র শাহবাজ আহমেদকে ছাড়া আর কাউকে কি দেখা যাচ্ছে যিনি আগামী দু/তিন বছরে ভারতীয় দলে নিজেকে অপরিহার্য প্রমান করতে পারবেন? তাও যতদিন জাদেজা খেলবেন, শাহবাজ যতই পারফর্ম করুন, প্রথম দলে আসবেন না। অন্যদিকে পেস বোলিং বিভাগে এত প্রতিযোগিতা(!), সেখানে ঈশান পোড়েল, আকাশদীপরা পিছিয়ে পড়েছেন, তাও ঈশানের যতটুকু সম্ভবনা ছিল, একটা অদ্ভুত ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে প্রতিবার দলে নিয়ে মাঠের বাইরে বসিয়ে রেখে সেই সম্ভবনায় জল ঢেলে দিচ্ছে, প্রায় সমান যোগ্যতার হয়েও এগিয়ে যাচ্ছেন হর্ষলরা। আর ব্যাটিং বিভাগে ঈশ্বরনের ধারাবাহিকতার অভাব, সুদীপ ঘরামি এবং অভিষেক পোড়েল সবে শুরু করেছে, আর সবচেয়ে বড় কথা সরফরাজ, যশস্বী জয়সওয়াল-রা যখন ঝুড়িঝুড়ি রান করেও আলোচনার ত্রিসীমানায় নেই, তখন বাকিটা নিয়ে না ভাবাই বোধহয় ভালো।
অর্থাৎ যা দাঁড়ালো কেউ অভাবনীয় পারফরম্যান্স করে সব সমীকরণ ঘেঁটে না দিলে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধারাবাহিকতার সঙ্গে ক্রিকেট খেলার প্রেক্ষিতে, বাংলা ক্রিকেটের যে স্বর্ণযুগ ১৯৯৬ সালে লর্ডসের মাটিতে শুরু হয়েছিল, গতকাল লর্ডসের মাটিতেই সম্ভবত তার পরিসমাপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল।
তথ্য : সুমিত গাঙ্গুলি