গত ৮ই এপ্রিল ইংল্যান্ডে শুরু হল ১২২তম কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ। বিশ্বের সবথেকে অভিজাত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মান্যতা পায় এই প্রতিযোগিতা। আর পাবে নাই বা কেন? দেশ-বিদেশের বহু ক্রিকেটার রীতিমত যোগ্যতা প্রদর্শন করে খেলতে আসেন এই প্রতিযোগিতা। অথচ ব্রিটিশ খেলোয়াড়েরা কিন্তু অন্য দেশে গিয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কমই খেলেন। আইপিএল আসার আগে অন্য দেশে ‘লিস্ট এ’ প্রতিযোগিতা খেলতেও তাঁরা যেতেন না। আর প্রথমার্ধে সুইং বোলিং সামলানো এবং পরের দিকে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে নিজেদের কেরামতি প্রদর্শনের এত বড় মঞ্চ আর আছে কি?
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/05/county-championship-logo.jpg?w=1024)
একটু ইতিহাসের পাতার দিকে নজর ফেরানো যাক। সরকারি মতে, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয় ১৮৯০ সালে। কিন্তু ১৮৬৪ সাল থেকেই বেসরকারি প্রতিযোগিতা চালু ছিল। তবে ইন্টার-কাউন্টি দ্বৈরথ অবশ্য তারও শতবর্ষ আগে থেকেই চলছিল। তা এই ১৮৬৪ থেকে ১৮৮৯ অবধি চলা ২৬ মরসুমে নটিংহ্যামশায়ার জেতে ৮ বার, যার মধ্যে ১ বার সম্মান ভাগাভাগি করতে হয়। গ্লস্টারশায়ার এবং সারে ৩ বার করে একক এবং ১ বার করে যুগ্মজয়ী হয়। ইয়র্কশায়ার ২ বার একা খেতাবের স্বাদ পেলেও ৩ বার অন্যের সাথে স্বাদ ভাগাভাগি করতে হয়। ল্যাঙ্কাশায়ার এবং মিড্লসেক্স ১ বার করে খেতাব জয় করে। অবশ্য ল্যাঙ্কাশায়ার তিনবার যুগ্মজয়ীও হয়।
১৮৮৯ সালে বড়দিনের পক্ষকাল আগে ১০ই ডিসেম্বর কাউন্টির সচিবরা খোদ লর্ডসেই আলোচনায় বসলেন। ‘ক্রিকেট: আ উইকলি রেকর্ড অফ গেম’ ম্যাগাজিনের থেকে জানা যায়, সেই যুগের মেজর কাউন্টি বলতে ছিল, সারে, কেন্ট, ইয়র্কশায়ার, ল্যাঙ্কাশায়ার, গ্লস্টারশায়ার, সাসেক্স, মিড্লসেক্স, নটিংহ্যামশায়ার। বহু তর্ক-বিতর্কের পর হাত তোলা ভোটের মাধ্যমে ঠিক হল, নির্দিষ্ট ক্রীড়াসূচীর ভিত্তিতে প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা হবে। সবাই হয়ত সহমত হননি। অন্তত ‘ক্রিকেট: আ উইকলি রেকর্ড অফ গেম’ ম্যাগাজিনটি তাই-ই বলে। কিন্তু এই বিষয়ে সাহেবগণ গণতন্ত্রকে মেনে নিয়েছিলেন। এরপর মাইনর কাউন্টিগুলি, অর্থাৎ ডার্বিশায়ার, ওয়ারউইকশায়ার, লিস্টারশায়ার, হ্যাম্পশায়ার, সমারসেট, স্টাফোর্ডশায়ার, ডারহাম এবং এসেক্স-এর সচিবরাও নিজেদের মধ্যে মিটিংয়ে বসলেন। এঁরা কিন্তু সহমত হলেন চ্যাম্পিয়নশিপের বিষয়।
অবশেষে ১৮৯০ সালের ১২ই মে প্রথমবারের মতো অফিসিয়াল ক্রিকেট কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের ঢাকে কাঠি পড়ে। ব্রিস্টলে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ইয়র্কশায়ার গ্লস্টারশায়ারকে আট উইকেটে পরাজিত করে। প্রতিযোগিতায় প্রথম সেঞ্চুরি করেন জেমস ক্র্যানস্টন (গ্লস্টারশায়ার)। বলে রাখা ভালো, সেই টুর্নামেন্টে পয়েন্ট সিস্টেম অবশ্য ছিল না। জয়-পরাজয়ের যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে সারে হয় বিজয়ী আর বিজিত ল্যাঙ্কাশায়ার।
এরপর থেকে নিয়ম মেনে প্রতিবছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা চলছে। তবে ১৯১৫-১৮ এই চার বছর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে খেলা হয়নি। যেমন খেলা বন্ধ ছিল ১৯৪০-৪৫ সাল অবধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। সাম্প্রতিক কালে করোনা অতিমারীর কারণে ২০২০ সালে খেলা বন্ধ ছিল।
এযাবৎকাল অবধি কাউন্টিগুলির জয়-পরাজয়ের বিচার করলে একক ৩৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবথেকে সফল দল ইয়র্কশায়ার। অনেক দূরে দ্বিতীয় সফল দল সারে (২০ বার)। এরপর মিড্লসেক্স ১৩ বার, ল্যাঙ্কাশায়ার ৯ বার করে এই খেতাব জিতেছে। এসেক্স এবং ওয়ারউইকশায়ার জিতেছে ৮ বার করে, কেন্ট ৭ বার, নটিংহ্যামশায়ার ৬ বার, উরস্টারশায়ার ৫ বার। ৩ বার করে জিতেছে ডারহাম, গ্লামোরগন, গ্লস্টারশায়ার এবং সাসেক্স। ২ বার জিতেছে হ্যাম্পশায়ার এবং ১ বার ডার্বিশায়ার। ইয়র্কশায়ার, সারে, ল্যাঙ্কাশায়ার এবং কেন্ট ১ বার করে সম্মান ভাগাভাগি হয়েছে। মিড্লসেক্সকে খেতাব ভাগ করে নিতে হয়েছে ২ বার। গ্লস্টারশায়ার, নর্থাম্পটনশায়ার এবং সমারসেট অদ্যবধি খেতাবের স্বাদ পায়নি।
বলা ভালো, উপরের তথ্যটি শুধুমাত্র মেজর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের বললাম। আমাদের রঞ্জি ট্রফির নিরিখে যাকে বলে এলিট গ্রুপ। উপরের বিজিতদের মধ্যে অনেকেই এখন মাইনর কাউন্টিতে অবনমিত হয়েছে। আবার মাইনর কাউন্টি থেকে মেজর কোনটিতে উত্তরণও ঘটে প্রতিবছর। এই বিষয়টি বলার আগে একটু পয়েন্ট সিস্টেম নিয়ে বলে রাখা ভালো।
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের একটি ম্যাচ জিতলে পাওয়া যায় ১৬ পয়েন্ট। ড্র বা টাই হলে ৮ পয়েন্ট করে ঘরে আসে। আর হেরে গেলে যথারীতি শূন্য। তবে জয়, পরাজয়, ড্র, টাই যাই হোক না কেন বোনাস পয়েন্ট সর্বদাই ঘরে আসতে পারে। বোনাস পয়েন্টার তালিকা নিচে দেওয়া হল:
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/05/image.png?w=625)
এইভাবেই খুঁটে-খুঁটে পয়েন্ট সংগ্রহ করেই কেউ হয় বিজয়ী, কেউ বা বিজিত আর কেউ থেকে যায় মাঝামাঝি স্থানে। আর লাস্ট হলেই ফেল করে মাইনর কাউন্টিতে নেমে যেতে হয়। মাইনর কাউন্টির ফার্স্টবয়রা প্রমোশন পেয়ে চলে আসে মেজর কাউন্টিতে।
এবার একটু রেকর্ডের কথাও বলা যাক। ২০২১ সাল অবধি কাউন্টি ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করেছে ইয়র্কশায়ার। ১৮৯৬ সালে এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের বিরুদ্ধে তারা করে ৮৮৭ রান। গ্লস্টারশায়ারের বিরুদ্ধে তাদেরই মাঠে নর্থাম্পটনশায়ার মাত্র ১২ রানে গুটিয়ে যায়। এটি দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
![](https://willowrwill.files.wordpress.com/2022/05/640px-brian_lara_at_2012_mumbai_marathon_pre_bash.jpg?w=640)
এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের অধীশ্বর ব্রায়ান চার্লস লারা। ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে এজবাস্টনে ৫০১ রান করে তিনি অপরাজিত থাকেন। এটি ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র কুইন্টপল সেঞ্চুরি। চারশোর বেশি রান অবশ্য আর্চি ম্যাকলারেন (৪২৪) এবং গ্রেম হিক (৪০৪) করেছেন। ৯ জন বোলার এখনও অবধি এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছেন। তবে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড (১০/১০) আছে হেডলি ভেরিটির।
ভারতীয় খেলোয়াড়দের যেমন রনজি ট্রফি না খেললেও চলে, বিলেতে কিন্তু তা নয়। নিয়ম করে কাউন্টি খেলতেই হবে। এমনকি টেস্ট ম্যাচে ব্যর্থ হলেও কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে রান করেও জাতীয় দলে টিঁকে থাকা বা ফিরে আসা যায়। অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের জন্যও কাউন্টি দরজা খুলে রেখেছে। আসলে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাস অন্য কোনও দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট চলে না। তাই খেলার মধ্যে নিজেকে রেখে ঘষে-মেজে নেওয়ার এটাই সেরা সুযোগ। এমনকি, ইংল্যান্ড দলের আন্তর্জাতিক ক্রীড়াসূচীও কাউন্টির কথা মাথায় রেখে বানানো হয়।
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ বা এল ভি = কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ এ মেজর কাউন্টিতে এবার খেলছে এসেক্স, গ্লস্টারশায়ার, হ্যাম্পশায়ার, কেন্ট, ল্যাঙ্কাশায়ার, নর্থাম্পটনশায়ার, সমারসেট, সারে, ওয়ারউইকশায়ার এবং ইয়র্কশায়ার। মাইনর কাউন্টির দলগুলি হল ডার্বিশায়ার, ডারহাম, গ্ল্যামারগন, লেস্টারশায়ার, মিড্লসেক্স, নটিংহ্যামশায়ার, সাসেক্স এবং উরস্টারশায়ার।
অতএব, চোখ রাখুন “উইলোর উইল”-এর পাতায়। প্রতি সপ্তাহে একটি করে কাউন্টি ক্যাপসুল আসতে চলেছে।
[…] দিতে পারে। বোনাস পয়েন্টের জটিল গণনা আমার আগের পোস্টে উল্লেখ করেছি। কাউন্টি ক্রিকেট শুধুমাত্র […]