টেস্ট ক্যাপ সংক্রান্ত কিছু মজার পরিসংখ্যান প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি পাঠককে।
লর্ডসের ময়দানে ১৯৩২-এর সেই ঐতিহাসিক টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার সোরাবজি কোলার টেস্ট ক্যাপের ক্রমাঙ্ক ও সারা জীবনে খেলা মোট টেস্টের সংখ্যা দুটোই ছিল ২।
উক্ত টেস্টেই গায়ে ব্লেজার চড়িয়ে ডগলাস জারডিনের সঙ্গে টস করতে যাওয়া সিকে নাইডুর টেস্ট ক্যাপের ক্রমাঙ্ক ও সারা জীবনে খেলা মোট টেস্টের সংখ্যা দুটোই ছিল ৭।
মে ২৫, ১৯৩৬। সুরাটে জন্ম ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৯-৭০ পর্বে ২৬ টেস্ট খেলা ন্যাটা অলরাউন্ডার রুসি সুর্তির। টেস্ট ক্রিকেটের আসরে কখনও তিন অঙ্কের ইনিংস খেলতে না পারা এই গুজরাটির টেস্ট ক্যাপের ক্রমাঙ্ক ও সর্বোচ্চ স্কোর দুটোই ছিল ঠিক ৯৯।
ক্যালেন্ডারের পাতায় সুর্তির আবির্ভাবের ঠিক দু’দিন পরই (মাঝে যদিও ছিল দীর্ঘ ছাব্বিশ বছরের ব্যবধান) পৃথিবীর আলো দেখা রবি শাস্ত্রীর টেস্ট ক্যাপের ক্রমাঙ্ক ও অর্থোডক্স স্পিনে অর্জিত মোট উইকেটসংখ্যা উভয়ই ছিল ঠিক ১৫১।
বলে রাখি, টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে ব্লেজার গায়ে চড়িয়ে আজ অবধি টস করতে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে পঁয়ত্রিশ ভারতীয় পুরুষের বরাতে। প্রথম চারের নামধাম (নাইডু, ভিজি, ইফতিকার ও লালা অমরনাথ) ইতিমধ্যেই এসেছে আমাদের আলোচনায়। বাড়তি যা বলার, অধিনায়ক হিসেবে দেশকে প্রথম রাবার জয়ের স্বাদ দিয়েছিলেন অমরনাথ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৫২-৫৩ ঘরোয়া সিরিজে।
মার্চ ১১, ১৯১৫। সাংলিতে জন্ম পঞ্চম ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক তথা ১৯৪৬ থেকে ১৯৫২-৫৩ পর্বে ৩০ টেস্ট খেলা মারাঠি টপ-অর্ডার ব্যাটার বিজয় হাজারের। ১৯৪৭-৪৮ অ্যাডিলেড টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৯৪) প্রথম ভারতীয় পুরুষ হিসেবে যিনি হাঁকিয়েছিলেন জোড়া শতরান (১১৬ ও ১৪৫)। অধিনায়ক হিসেবে এঁর সব চাইতে বড় অর্জন ছিল দেশকে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ দেওয়া (তাও ইনিংসের ব্যবধানে)। ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৫১-৫২ মাদ্রাজ (চিপক) টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩৪৮)।
ষষ্ঠ থেকে নবম ভারত অধিনায়কদের (ভিনু মানকড়, গোলাম আমেদ, পলি উমরিগর ও হেমু অধিকারী) নামগুলি অন্যান্য সূত্রে ইতিমধ্যে এসেছে আমাদের আলোচনায়। বলে রাখি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৫৮-৫৯ ঘরোয়া সিরিজে এঁদের প্রত্যেককেই ঘটনাচক্রে নিতে হয়েছিল অধিনায়কের দায়িত্ব। উপরন্তু হেমু অধিকারী সম্পর্কে আর-একটি কথাও আলাদা করে বলার। জীবনের শেষ টেস্টে অধিনায়কত্বই শুধু নয়, আর-একটি প্রাপ্তিও অপেক্ষা করছিল এঁর বরাতে। টেস্ট ক্রিকেটের আসর থেকে সংগৃহীত তিনটি উইকেটের সব ক’টিই হেমু অর্জন করেছিলেন উক্ত শেষ দফাতেই।
অক্টোবর ২৭, ১৯২৮। বরোদায় জন্ম দশম ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক তথা ১৯৫২ থেকে ১৯৬০-৬১ পর্বে ১১ টেস্ট খেলা টপ-অর্ডার দত্তাজিরাও গায়কোয়াড়ের। ইরফান পাঠানের জন্মদিনে অর্ধশতাব্দীরও বেশি আগে ভূমিষ্ঠ দুই পুরুষের মধ্যে ইনি দ্বিতীয়। টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে এঁর অর্জনকে যদিও ছাপিয়ে যান আত্মজ অংশুমান গায়কোয়াড়। ১৯৭৪-৭৫ থেকে ১৯৮৪-৮৫ পর্বে ৪০ টেস্ট খেলা অংশুমানের জন্ম সেপ্টেম্বর ২৩, ১৯৫২-য় বোম্বেতে।
একাদশ ভারত অধিনায়ক পঙ্কজ রায়ের নামটি ইতিমধ্যে এসেছে আমাদের আলোচনায়।
জুলাই ২৬, ১৯২৭। অবিভক্ত ভারতবর্ষের করাচিতে জন্ম দ্বাদশ ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক তথা ১৯৫২ থেকে ১৯৫৯-৬০ পর্বে ৩৩ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার গুলাবরাই রামচাঁদের। প্রসঙ্গত, টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে ভারতের প্রথমবারের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করা এঁরই অধিনায়কত্বে। ঘটনাটি ঘটে জেশুভাই পটেলের এক ইনিংসে ৯-৬৯ খতিয়ানে স্মরণীয় সেই টেস্টে।
মার্চ ৭, ১৯৩৪। গোধরায় জন্ম ত্রয়োদশ ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক তথা ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬১-৬২ পর্বে ৩১ টেস্ট খেলা ন্যাটা গুজরাটি ওপেনার নরি কন্ট্রাক্টরের। ঘটনাচক্রে মার্চ ৭, ১৯৪২-এ আলিবাগে জন্ম ১৯৬৭-৬৮ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড জোড়া সফরে ৪ টেস্ট খেলা বাঁ-হাতি মুম্বইকর পেসার উমেশ কুলকার্নিরও।
প্রসঙ্গত, প্রায় নবতিপর কন্ট্রাক্টরের নামটি সাম্প্রতিক অতীতে হঠাৎই ভেসে উঠেছিল আলোচনায়। যে ঘটনার জেরে এই ভেসে ওঠা তা যদিও ছয় দশকের পুরনো। ১৯৬১-৬২ ক্যারিবিয়ান সফরে বার্বাডোজের বিরুদ্ধে এক ট্যুর ম্যাচে ফাস্ট বোলার চার্লি গ্রিফিথের বিষাক্ত বাউন্সারে খুলিতে জোরালো আঘাত পাওয়া কন্ট্রাক্টরের মাথায় বসাতে হয়েছিল ধাতব পাত। ইদানীংকালে ঘনঘন মাথার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করে আবার বের করে নেওয়া হয়েছে পাতটি। অসমসাহসে ভর করে ১৯৭০-৭১ অবধি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে গেলেও তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে যতি পড়ে উক্ত ক্যারিবিয়ান সফরেই।
জানুয়ারি ৫, ১৯৪১। ভূপালে জন্ম চতুর্দশ ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক পাতৌদির নবাব (তথা ইফতিকার-পুত্র) মনসুর আলি খানের। বলে রাখি, জানুয়ারি ৫, ১৯৪৮-এ আলওয়ারে জন্ম ১৯৭৪-৭৫ থেকে ১৯৭৬-৭৭ অধ্যায়ে ৫ টেস্ট খেলা রাজস্থানি ওপেনার পার্থসারথি শর্মারও।
১৯৬১-৬২ থেকে ১৯৭৪-৭৫ পর্বের প্রবল প্রতাপশালী পেসারদের যুগে এক চোখে ৪৬ টেস্ট খেলাতেই (এবং তারপরও ৩৪.৯১ ব্যাটিং গড় রাখাতেই) হদিস মেলে পাতৌদির শেষ নবাবের অকল্পনীয় ব্যাটিং প্রতিভার। ক্রিকেট মস্তিষ্কের নিরিখেও আজও দেশের শ্রেষ্ঠতম টেস্ট অধিনায়কদের অন্যতমই মানা হয় তাঁকে। স্রেফ পরিসংখ্যানে ধরা যাবে না সত্যটা। যেহেতু মালমশলা কমই ছিল তাঁর হাতে। যাক, বাপব্যাটায় সাদা পোশাকে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার এমন নজির বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই বিরল।