ঋদ্ধিমানের পরিস্থিতি

ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের আনন্দ পূর্ণতা পাওয়ার আগে অনেকটাই ভিন্নমুখী হয়ে গেল ঋদ্ধিমান-বিতর্ক নতুনভাবে মাথা চাড়া দেওয়ার কারণে। গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় ক্রিকেট ঋদ্ধিমান সাহাকে ঘিরে বিতর্কে তোলপাড়। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে আগামী মার্চের ৪ তারিখ থেকে টেস্ট শুরু হতে চলেছে। গত শনিবার ভারতীয় দলের নাম ঘোষিত হয়েছে। চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কা রাহানে, ঈশান্ত শর্মার সঙ্গে বাদ পড়েছেন বাংলার উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। এই নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে আড়াআড়ি দুটি ভাগ স্পষ্ট। সত্যি বলতে কি,এবার যেন বিতর্কটার মধ্যে চাপা আগুন ধিকিধিকি জ্বলছেই।স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে-থাকা ঋদ্ধিমান রবিবার সশরীরে ইডেনে হাজির না থেকেও ছিলেন সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে। ৩-০ মার্জিনে টি-২০ সিরিজ জেতার পরেও হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে প্রশ্নের উত্তরে তাই বাংলার ‘সেন্টিমেন্ট’-কে আহত না করে বলতে হল, “আমাদের মধ্যেকার কথাবার্তা ঋদ্ধি প্রকাশ করে দেওয়ায় আমি মোটেই হতাশ নই। ঋষভ পন্থ এই মুহূর্তে আমাদের এক নম্বর উইকেটকিপার। পাশাপাশি আমরা একজন দ্বিতীয় কিপারকে (কে এস ভরত) ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে চাই।এই সত্যটা একজন বাদ-পড়া ক্রিকেটারকে আমি জানানোটাই শ্রেয় মনে করেছিলাম। তাই বলে ওর প্রতি সম্মান বা ভারতীয় ক্রিকেটে ওর অবদানের মাহাত্ম বিন্দুমাত্র কমছে না।”

ছবি : গুগল

ঘটনা হচ্ছে, এর আগে নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা ঋদ্ধিমানকে জানিয়েছিলেন “তোমাকে আমরা ভবিষ্যতের জন্য আর ভাবছি না । তুমি অবসরের কথা ভাবতে পারো।” এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক মেসেজের উল্লেখ করে ঋদ্ধি দাবি করেন “নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কানপুরে লড়াকু ৬১ করার পরে দাদি আমাকে লিখেছিল, যতদিন আমি বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আছি, তুই টিমে থাকবি ।” একথা ঠিক, একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং একই রাজ্যের প্লেয়ার হিসাবে সৌরভ উৎসাহিত করার জন্য কাউকে এমনটা বলতেই পারেন। কিন্তু বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচকদের কাছে তিনি অনুরোধ বা নির্দেশ পাঠিয়েছেন বলে শোনা যায়নি (এক্তিয়ারও আছে কিনা জানা নেই)। এটা পরিস্কারভাবেই নির্বাচকদের ব্যাপার। স্বভাবতই ঋদ্ধি বুঝে যান তাঁর রথচক্র ক্রমশ বসে যাচ্ছে। তাই হেড কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে তার কথাবার্তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন। দেশ জুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। কিরমানি, বেঙ্গসরকার, শেহবাগ, রবি শাস্ত্রীদের প্রকাশ্য বিবৃতির চাপে চেতন শর্মা ঢোঁক গেলার সুরে বলেছেন “আমরা কারও জন্য দরজা বন্ধ করিনি। সকলকেই বলেছি রঞ্জি ট্রফিতে খেলে রান এবং উইকেট নিয়ে ভারতীয় টিমে ফিরতে।” যেটা বলার সেটা হচ্ছে, চেতনের এই দ্বিচারিতা কেন? ভরতকে ভবিষ্যতের জন্য ভাবা হোক, কিন্তু তাই বলে ছন্দে-থাকা একজন সেরা মানের কিপারকে বাদ যেতে হবে কেন? তাঁর দোষটা কোথায়? তাহলে কি বয়স? আচ্ছা, চেতন শর্মা কি জানাবেন, শিখর ধাওয়ান ৩৬ বছর বয়সে ওডিআই খেলতে পারেন, ৩৫ বছর বয়সে অশ্বিন টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ঢুকে পড়লে দোষ নেই? বেঙ্গসরকার ঠিকই বলেছেন, বয়স কখনই কোনও ক্রিকেটারের সাফল্য মাপার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। আর রঞ্জিতে পুজারা, রাহানেরা ব্যাট-হাতে রান কিংবা ইশান্ত শর্মা বল-হাতে সাফল্য পেতেই পারেন। কিন্তু ঋদ্ধিমান রঞ্জিতে কি করবেন, গন্ডায় গন্ডায় ক্যাচ, আর স্টাম্পিং করে দেখাবেন? নির্বাচকদের পছন্দ না হ’লে কাউকে টিমে সুযোগ না দিতেই পারেন। কিন্তু ‘তুমি অবসরের কথা ভাবতে পারো’ এটা বলার এক্তিয়ার কি কারও সত্যিই আছে?