মরশুমের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার অরিত্র চ্যাটার্জীর সঙ্গে কিছুক্ষন

২০১১-১২ সালে যখন বিজয় হাজারে ট্রফি জেতে বাংলা সেই বছর তিনি ছিলেন দলে। এর পরে দুটি বছর সব ফরম্যাটেই তাঁকে রাখা হয় টিমে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টিম কম্বিনেশনে ফিট করেননি তিনি। এরপরে ২০২১-২২ সালে লিমিটেড ওভারের খেলায় বাংলার দলে তিনি ছিলেন অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সেইবারও বদলায়নি কিছু। তিনি থেকে গিয়েছেন পনেরোতেই। আসতে পারেননি প্রথম এগারোয়।
এতো কিছুর পরেও কখনো ভেঙ্গে পড়েননি অরিত্র চ্যাটার্জী ওরফে লুথার। একসময় তিনি হয়ে পড়েছিলেন হতাশ এবং ভেবেছিলেন “খেলে কি লাভ?” কিন্তু তারপর আবার তিনি শুরু করেছেন খেলা এবং একইভাবে ধরে রেখেছেন নিজের পারফরমেন্স। চলতি বছরে তার পারফরমেন্স বল হাতে স্বাভাবিকভাবেই ভালো কিন্তু এছাড়া ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। তিনি এই বছর লাল বলের ক্রিকেটে করেছেন তিনখানা হাফসেঞ্চুরি এবং ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে লিগ সেমিফাইনালেও ছিল তার হাফসেঞ্চুরি। যদিও অম্বরীশ মিত্র বলেন “লুথারের ব্যাটিংয়ের হাত কলেজে পড়ার সময় থেকেই ভালো।”


চলতি বছরের নিজের বোলিংয়ের ওপর কাজ করে ক্যারম বল আয়ত্ত করেছেন অরিত্র। তার কথায় এই ক্যারম বল তাঁকে বাঁহাতি ব্যাটারদের কাছে করে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য। এছাড়াও টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ কিছু ইয়র্কার ফেলাও প্র্যাক্টিস করেছেন তিনি। অরিত্রর কথায় সঞ্জীব সান্যাল তাঁকে সাহায্য করেছেন খুব। কালীঘাট ক্লাবের প্র্যাক্টিসে এমন দিনও গেছে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে একইরকম বল ফেলার চেষ্টা করে গিয়েছেন অরিত্র এবং তা পর্যবেক্ষণ করেছেন কোচ সঞ্জীব সান্যাল। অরিত্রর কথায় “কি করতে চাইছি সেটা মাথায় থাকলেও সেটা কাজে করতে যে সাহায্য দরকার হয় তা সবসময়ই করেছেন সঞ্জীব সান্যাল।”
সাদা বলের ফরম্যাটে অরিত্র চ্যাটার্জী ছিলেন দুর্দান্ত। ওয়ান ডে ফরম্যাটে ব্যাট হাতে যেমন দুরন্ত ছিলেন ঋতম পোড়েল, তেমনই বল হাতে একেবারে গো টু ম্যান হয়ে যান অরিত্র চ্যাটার্জী। এই ব্যাপারে তিনি সরাসরি বললেন “এটাই আমার কাজ। আমার খুব ভালো লাগছে যে ক্লাব আমাকে ভরসা করে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেখানে আমি ডেলিভার করতে পারছি। আমার নিজের ভালো পারফর্ম করা যেমন কাজ তেমনই দলকে জেতানোও কাজ।”
এছাড়াও তিনি এবং মিথিলেশ দাস একটা দুর্দান্ত বোলিং জুড়িতে পরিণত হয়েছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে। সেই প্রসঙ্গে অরিত্রর মত হলো এই যে “মিথিলেশ দারুণ ছেলে। এক বছর ওর সাথে থাকতে থাকতে অফ দ্য ফিল্ড কেমিস্ট্রি এতো ভালো হয়ে যায় যে অন ফিল্ড বোঝাপড়া তৈরিতে খুব বেশী খাটতে হয়নি। এছাড়া ওর এবং ক্লাবের চিন্তাধারা বেশ মিলে যায় বলে সেটা খুব ভালো হয়েছে।”


২৫টি ম্যাচ বাংলা দলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তিনি বসে থেকেছেন এগারোর বাইরে। তার বয়স এখন চলছে ৩৪। আচ্ছা এই বয়সজনিত কারণ কি সিলেকশন আটকাতে পারে? অরিত্র বলেন “আমি যখন ২৩-২৪ ছিলাম তখন তো বয়স ফ্যাক্টর ছিলোনা। আর তারপরে ৩৩ বছর বয়সে গিয়েও ম্যাচ পাইনি। যদি ৩৩ বয়স ফ্যাক্টর হয় তবে তো ভারতীয় দল থেকে প্রায় দশজন খেলোয়াড় বাদ চলে যাবে। ক্রিকেটে আমার মতে বয়স একটা সংখ্যা। একজন স্পিনারের ক্ষেত্রে বয়স কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়। তাহলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো আমার থেকেও বড়ো। একজন লেগ স্পিনার ৪২ বছর বয়সে অভিষেক করে আইপিএলে হ্যাটট্রিক করলো তাঁকে আমরা সবাই চিনি, প্রবীণ তাম্বে। এটা একটা বাদ দেওয়ার একটা কথা। আমার ৩৪ বছর এখন, তাহলে তো এই বয়সে বাদ গেলে ভারতীয় দল হবেইনা। আমাদের রাজ্য দলে মনোজদা, রুকুদা এরা নিয়মিত রান করছে এবং পাপালিদা আইপিএলে রান করছে এবং তার বয়স প্রায় আমার থেকে চার বছর বেশী।”
কালীঘাট গ্রুপ ‘বি’তে থাকা দল বলে কি সিলেকশন সমস্যা হতে পারে? অরিত্র বলেন যে তিনি আগের বছর টাউন ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন এবং যখন সেই ক্লাবের পারফরমেন্স ধরেও তিনি ম্যাচ পাননি সেক্ষেত্রে কালীঘাট ক্লাবে খেলা কোনো নির্বাচনী সমস্যা তৈরী করবেনা।
সব মিলিয়ে এই মরশুমে ৩৯ উইকেট তুলেছেন অরিত্র চ্যাটার্জী এবং সেই সূত্রে যতই তার বয়স ৩৪ হোক তিনি খুব একটা নির্বাচনী বাঁধা বলে মনে করেন না। তার ব্যাট-বলের পারফরমেন্স দেখে আশা রাখাই যায় যে এই বছর তিনি বাংলার টিম লিস্টে থাকবেন এবং হয়তো ম্যাচে ও সুযোগ পাবেন।