বেঙ্গালুরু শহরে এসেছেন অথচ ব্রিগেড রোড-এ যাননি, এমন মানুষ বিরল। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের সাথে তুলনা করছি না, কিন্তু ব্রিগেড রোড ইজ ব্রিগেড রোড। মেট্রো রেলের ব্রিজ তৈরি হওয়ার পরে অবশ্য আকর্ষণ কিছুটা কমেছে এই ঐতিহাসিক রাস্তার। তবে, ব্রিগেড রোডই হল বেড়ানোর সেরা জায়গা। ওধারে অনিল কুম্বলে সার্কেল, এবং ওই মোড় পেরোলেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে যাবেন বেলফুল বিক্রেতা, অজস্র মুখরোচক খাবারের দোকান এবং রাস্তার শেষ প্রান্তে বিগ কিডস কেম্প যেখানে জ্যান্ত পুতুলেরা আপনাকে স্বাগত জানাবে।
এ শহরের মাঝখানেই রয়েছে বই এর দোকান ‘বুক ওয়ার্ম’। পাঠকের ভিড় লেগে থাকে সর্বক্ষণ। এখানেই সাম্প্রতিক এক সন্ধেয় গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল ১০০ বই-এ অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য। ওখানেই জমে ওঠা অনুষ্ঠানে হঠাৎই প্রবেশ করেন মুখে মাস্ক পরিহিত এক লম্বা চেহারার পুরুষ। দোকানের প্রহরীও চিনতে পারেননি। এমনকি চিনতে পারেননি পাশে বসা মহিলাও। কিন্তু স্টেজ থেকে চিনতে পেরেছিলেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ এবং তিনি ওই অতিথিকে নাম ধরে সামনে এগিয়ে আসার অনুরোধ করতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। শুরু হয়ে গিয়েছিল হইচই, সেলফি তোলার অনুরোধ নিয়ে হুড়োহুড়ি। কিন্তু রাহুল পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সেলফি তোলা হবে অনুষ্ঠানের শেষে। তার আগে মন দিয়ে ভিশির কথা শুনতে চান তিনি এবং পাঠকবর্গ তাঁর অনুরোধ মেনে দেন।
ছোটবেলায় গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে (সঙ্গে সুনীল গাভাসকারও ছিলেন) সামনে রেখে যাঁর ক্রিকেট অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল, তিনি যে তাঁর আদর্শ ক্রিকেটারের অটোগ্রাফ সেশনে হাজির হবেন, এতে হয়তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু অবাক হয়েছেন স্বয়ং ভিশি, ‘দোকানের উদ্যোক্তারা রাহুলকে নিমন্ত্রণ জানাননি, তবু ও এসেছিল, এতে বোঝা যায় মানুষটা কোন ধাতুতে গড়া!’ ১২ই মার্চ চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার দিন-রাতের ম্যাচের বিরতিতে সুনীল গাভাসকার, কপিলদেবরা মিলে ভিশির আত্মজীবনীর উদ্বোধন করার সময় তিনি ছিলেন নিভৃতবাসে, ফলে খানিক দূর থেকেই দেখতে হয়েছিল অনুষ্ঠান। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আরও একবার তাঁর এই মানসিকতার প্রতিফলন দেখা গেল দু’মাস পর। চাইলেই তিনি পারতেন অনুষ্ঠানের মাঝপথে পাঠকদের সেলফি তোলার আবদার মেনে নিতে। কিন্তু তাতে হয়তো অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য নষ্ট হতো, সুর কেটে যেত। এটা অনুধাবন করেই বসেছিলেন দর্শক আসনের পেছনের দিকে। ভিশি দুম করে তাঁর আগমনের কথা না জানালে এই হইচইও হতো না, ”হঠাৎ চোখ পড়তেই আমি রাহুলকে সামনে আসতে বলেছিলাম, আমাকে তো বলতেই হবে। আমার অনুষ্ঠানে এসেছে আমন্ত্রণ ছাড়াই। এই ভদ্রতা, সম্মান প্রদর্শনের উদারতাটা খুব ভাল লেগেছে আমার।” ভালো লেগেছে আমাদেরও, এইজন্যই তো তিনি রাহুল দ্রাবিড়! যেমন গুরু তেমন শিষ্য!