কিছুদিন আগেকার কথা। বর্ধমান জেলার সঙ্গে পঁয়তাল্লিশ ওভারের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল নদীয়া দল এবং সেই ম্যাচটি ছিল ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান-ডে টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল। দেশবন্ধু পার্ক ওভালে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিন সকালটা ছিল অয়ন গুপ্তের। অলোক প্রতাপ সিং, অর্ক সরকারের সামনে সেদিন ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ভালো শুরু করেন অয়ন। এরপরে তন্ময় প্রামাণিক, তনুজিৎ আচার্য – প্রত্যেকেই ভালোরকম অবদান রাখেন। এরপরে ফিনিশিং টাচ দিতে আসেন রাজকুমার পাল।
আসার পরেই আজাজ আনসারি ও অর্ক সরকারকে একের পর এক বলে মারতে থাকেন বাউন্ডারি। মোট ৩৮টি বল খেলে সেদিন ৬টি চার ও সমসংখ্যক ছক্কার সাহায্যে ৭৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যান রাজ পাল। তাঁর দৌলতে ২৭৫ রান বোর্ডে তোলে নদীয়া। এছাড়া সেদিন বল হাতে ৮.৪ ওভার বল করে ২৭ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন রাজকুমার পাল যার ফলে বর্ধমান আটকে যায় ২০৩ রানে এবং নদীয়া পায় ৭২ রানে জয়।
ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান-ডে টুর্নামেন্টের লিডার-বোর্ডে তিনি নদীয়া জেলার তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৬৩ রান এবং বল হাতে বেশ কিছু ইকোনমিক্যাল স্পেল তাঁকে করে তুলেছে স্পেশাল। প্রায় ৬ বছরের ওপর মোহনবাগান দলের নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড় তিনি। মোহনবাগান দলকে ম্যাচ জিতিয়ে তিনি ছাপ রেখে গেছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্বের। চলতি সিএবি লাল বলের লিগে ব্যাট হাতে ৩৮.৭৫ গড় এবং ৮৭.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ১৫৫ রান করেছেন রাজ এবং ওই ৫ ম্যাচেই ২২ উইকেট নিয়ে মোহনবাগানের কোয়ালিফায়ারে ওঠা সুনিশ্চিত করেছেন রাজকুমার পাল। এমনকি কোয়ালিফায়ার স্তরে পর্যন্ত ম্যাচ জেতাচ্ছেন পয়ত্রিশ বছর বয়সী রাজকুমার।
টাউন ক্লাবের বিরুদ্ধে যাদবপুর ক্যাম্পাসে হয়ে যাওয়া মোহনবাগানের কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচেই প্রমাণ পাওয়া গেলো রাজকুমার পালের ম্যাচ জেতানোর। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সুপ্রদীপ দেবনাথ, ওমপাল বকেন. নাভেদ আহমেদ, মহম্মদ কাইফ সম্বলিত টাউন ক্লাব স্রেফ ১৯১ রানে গুটিয়ে গেলো এবং সেইক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিলেন রাজকুমার পাল। টাউন ক্লাবের প্রথম চারজন ব্যাটার সুপ্রদীপ দেবনাথ, নাভেদ আহমেদ, সন্দীপ তোমর এবং ক্রিজে সেট সৌরভ পালকে ফেরৎ পাঠান রাজকুমার এবং পরবর্তীতে আরো একটি উইকেট তিনি পান মহম্মদ কাইফের। সব মিলিয়ে তাঁর বোলিং ফিগার দাঁড়ালো ১৮-০-৭৯-৫। সঙ্গী বোলার অর্ণব নন্দী আরো তিনটি উইকেট নিয়ে নেওয়ায় সহজেই প্রতিপক্ষ দলকে ২০০ এর মধ্যে আটকে রাখে মোহনবাগান। বাকি কাজটুকু করার জন্য ব্যাট হাতে প্রস্তুত ছিলেন মোহনবাগান ব্যাটাররা। মাত্র ৩২.২ বলেই অভিমন্যু ঈশ্বরণ (৭৮) এবং সুদীপ চ্যাটার্জী (৬২)-র দৌলতে জয়ের রান উঠে যায় তাঁদের।
রাজকুমার পাল থেকেও তাঁর না-থাকার অভাব মোহনবাগান বোঝে একমাত্র ভবানীপুর ম্যাচে। দুই বাঁ-হাতি অভিষেক রমন এবং কৌশিক ঘোষ তাঁকে ভালো খেলে দেওয়ার পরে শুভ্রজিৎ দাসও এসে তাঁকে অপ্রভাবশালী বানিয়ে দেন। ফলে মরশুমে তাদের একমাত্র ম্যাচ হেরেছিল মোহনবাগান। এছাড়া সমগ্র মরশুমে দুরন্তভাবে উজ্জ্বল রাজ। মোহনবাগান আরো ট্রফি পাবে কিনা তা অবশ্যই সময় বলবে, কিন্তু এর মধ্যেই রাজকুমার পাল যা খেল দেখিয়েছেন তাতে তাঁর অবদান অবশ্যই হবে অনস্বীকার্য।