থানের ডম্বিভিলিতে জীবনের প্রথম স্কুল আর ক্রিকেট মাঠে গিয়ে বেশ নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে সেই মাঠে দাঁড়ানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন তিনি। লড়াইয়ের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে হয়ত শিকড়কে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। ২০২০–র ডিসেম্বরে এডিলেড টেস্টে ৩৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল ভারতীয় শিবিরে, তখন অনেক বড় ক্রিকেট বোদ্ধাও ভাবতে পারেননি যে, টিম ইন্ডিয়ার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। অনুষ্কা সন্তানসম্ভবা, স্ত্রী ও সদ্যোজাত সন্তানের পাশে থাকার জন্য দেশে ফিরে এলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নেতৃত্বের ভার তখন রাহানের কাঁধে। প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ে টালমাটাল জাহাজের হাল ধরেছিলেন বিরাটের তখনকার ডেপুটি। দক্ষ নাবিকের মতোই। পরের মেলবোর্ন টেস্টেই পাল্টা লড়াই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অসি শিবিরে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেঞ্চুরি করেছেন। সমতা ফিরিয়েছেন। গাব্বায় চতুর্থ টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার বুকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় তাঁর নেতৃত্বেই। সেই রাহানেকেই এখন কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভারতীয় টেস্ট দলে ঢোকার জন্য। ব্যাটে একটানা রানের খরা। ব্যর্থতার চাদর কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না শরীর থেকে। জাতীয় নির্বাচকরা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, আবার ফিরে যাও ঘরোয়া ক্রিকেটে, পারফর্ম করো, বাকিটা না হয় তারপরই ভাবা যাবে!
একই কথা বলা হয়েছে চেতেশ্বর পূজারাকেও। সতীর্থ রাহানের মতো তিনিও হেঁটেছেন ব্যর্থতার মিছিলে। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রাহানের মতো ব্যাট হাতে তিনিও পারেননি বিশেষ দাগ কাটতে। দু’জনেই ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। দেওয়াল লিখন তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। টেস্ট দলের দরজা বন্ধ হতে চলেছে এই দুই তারকা ক্রিকেটারের জন্য। প্রাক্তনদের একাংশ সোচ্চার ছিলেন, অনেক তো সুযোগ দেওয়া হল এই দু’জনকে, এবার দেখে নেওয়া হোক তরুণদের। সেই দাবিতেই সিলমোহর বসিয়েছেন নির্বাচকরা। রনজি ট্রফির সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে পূজারার পারফরম্যান্স আশাপ্রদ নয়। রাহানে তাও একটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই, ভবিষ্যতে পরিস্থিতির বিরাট কোনও পরিবর্তন না হলে এই দু’জনকে লাল-বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলের সাদা জার্সিতে দেখা খুবই কঠিন। সম্প্রতি বিসিসিআই–এর কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পূজারা এবং রাহানেকে ‘এ’ গ্রেড থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘বি’ গ্রেডে।
৯৫ টেস্টে পূজারার রান ৬,৭১৩। গড় ৪৩.৮৭। শতরান ১৮টি। রাহানে খেলেছেন ৮২ টেস্ট। রান করেছেন ৪,৯৩১। গড় ৩৮.৫২। সেঞ্চুরির সংখ্যা ১২টি। এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে নিয়ে টেস্টের নতুন নেতা রোহিত শর্মার বক্তব্য কী? রাহানে–পূজারার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ভাবনা কী? রোহিত বলেছেন, ‘ওদের জায়গা ভরাট করা মোটেই সহজ নয়। দেখুন, এই দলের জন্য দুই ক্রিকেটারের যা অবদান, তা কয়েকটা কথায় মোটেই সেরে ফেলা যায় না। ৮০–৯০টা টেস্ট খেলা, কঠোর পরিশ্রম করা, বিদেশের মাটিতে টেস্ট জেতায় অবদান রাখা, এগুলো তো অস্বীকার করা যায় না। টেস্টে ভারত এক নম্বর দল হয়েছে, তার পেছনে এই দু’জনের বিরাট ভূমিকা ছিল। নির্বাচকরা বলেছেন এইমুহূর্তে ওদের কথা ভাবা হচ্ছে না, কিন্তু আগামী দিনে নেওয়া হবে না, এমনটা মোটেও বলা হয়নি।’ রোহিতের কথায় একটু হলেও আশার আলো রয়েছে রাহানে–পূজারার ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদিও সব সংশয় এবং তার উত্তর রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে।
পুনশ্চ: রনজির তিন ম্যাচে বড় রান আসেনি তাঁর ব্যাটে। কিন্তু লড়াই না থামিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছেন চেতেশ্বর পূজারা। কাউন্টিতে যোগ দিচ্ছেন সাসেক্সের হয়ে খেলার জন্য। সেখানেই নিজেকে ঘষে–মেজে নিতে চাইছেন। রানে ফিরতে কাউন্টিকেই আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন পূজারা।