বিতর্কের নাম কি ঋদ্ধিমান সাহা? শান্তশিষ্ট মানুষটি হঠাৎ করে ফোঁস করে উঠেছেন। এখনকার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে জাতীয় দলের প্রত্যাবর্তনের আলোচনা বিশেষ নেই। প্রচারমাধ্যমে কোনও ‘রেসপেক্টেড’ সাংবাদিক তাঁকে ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেটা নিয়েই আসমুদ্রহিমাচল উত্তাল। ওই সাংবাদিক ঠিক করেছেন নাকি ভুল? নাকি চরম অন্যায়? এটাই কি আলোচনায় থাকা উচিত নয় যে কেন ঋদ্ধিমানকে বাদ দেওয়া হয়েছিল? সাংবাদিক প্রসঙ্গ তো এখানে সাব-প্লট মাত্র। আমার প্রশ্ন, এখানে একটাই। ওই সাংবাদিকের জন্যই কি ঋদ্ধিমান সাহাকে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে?
“উইলোর উইল” এবার এই হাতে গরম প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় ঢুকছে। থাকছে ঋদ্ধিমানের বক্তব্য, রাহুল দ্রাবিড়ের বক্তব্য, চেতন শর্মার বক্তব্য এবং আমাদের জবাব। নেটিজনদের উদ্দেশ্যে আবারও বলি উত্তপ্ত হয়ে থাকা এই প্রসঙ্গে একটু নিরপেক্ষ ভাবে আলোকপাত করুন না। আমরা চেষ্টা করছি।
যথা
ঋদ্ধি বলেছেন “আমি এই বছর রঞ্জি খেলব না। অনেকেই পারিবারিক কারনে ব্রেক নিয়েছে, আমিও তাই নিয়েছি।”
“উইলোর উইল”-এর জবাব: অবশ্যই রঞ্জি খেলা উচিত ছিল। উপেক্ষার জবাব বাড়িতে বসে দেওয়া যায় না। বাইশ গজে নিজেকে মেলে ধরার এমন সুযোগ কেন হারাতে দিচ্ছেন ঋদ্ধি? অভিমানাহত হয়েছেন, এটা তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু হাত গুটিয়ে বাড়িতে বসে থাকা উচিত হবে না, যদি ভারতীয় দলে আবার ফেরার ইচ্ছে থেকে থাকে।
ঋদ্ধি বলেছেন, “ভারতীয় দলের অনেকেই ব্রেক নেয়।’
উইলোর উইল এর বক্তব্য : ঠিক বলেছেন, তবে সেটা বাদ পড়ার পরে নয়। টাইমিংটা ঠিক হলো না ঋদ্ধি। এখনই তো খেলতে হবে। এই সিদ্ধান্তটা ঋদ্ধি না নিলেই পারতেন।
ঋদ্ধম বলেছবেন “রাহুল ভাই বলেছিলেন ভবিষ্যতে আমাকে আর ভারতীয় দলের জন্য ভাবা হবে না। ঘুরিয়ে বোধহয় অবসর নিয়ে নেওয়ার জন্য বলছিলেন।”
“উইলোর উইল”: নিশ্চিত নই যে বোর্ড-কর্তারা ঋদ্ধির সঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়কে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কিনা। ঋষভ পন্থ এর প্রতি নির্বাচকদের মনোভাব এবং পরিস্থিতির যা নির্যাস তাতে করে খুব ভালো হতো, যদি রাহুল বলতেন আপাতত তোমার কথা ভাবা হচ্ছে না। তুমি গিয়ে রঞ্জি খেলে তবে ফিরে এসো। মুখের উপর এভাবে মৃত্যুর পরোয়ানা না শোনালেও পারতেন। এই পেশাদার যুগটা যে এমনই নির্মম, ঋদ্ধি বোধহয় সেটা বুঝতে পারছেন না।
ঋদ্ধি বলেছেন “রঞ্জি ট্রফি আমি এই বছর খেলছি না, আগামী বছর খেলব না, এই কথা তো বলিনি।”
“উইলোর উইল”: ঋদ্ধি কি শোনেননি সর্বকালের অন্যতম সেরা একটি লাইন, ‘সময় চলিয়া যায়, নদীর স্রোতের ন্যায়’? আর এক্ষেত্রে একটা বছর মানে প্ৰকৃত অর্থে দু’বছর চলে যাওয়া। কেন? সামনের বছর রঞ্জিতে তাঁর গড় যদি ব্র্যাডমানের আন্তর্জাতিক গড়ের (৯৯.৯৪) থেকেও ভাল হয়, সেক্ষেত্রে তার মূল্যায়ন হবে তার পরের বছরে। ৩৮-এই ব্রাত্য, ৪০ পেরিয়ে গেলে তো ‘চালশে’র তকমা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
“কাঁধের অস্ত্রপচারের পরে ফিরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে যখন ঋষভ পন্থকে ছুটি দেওয়া হলো, তখন আমি খেলেছিলাম এবং ঘাড়ের ব্যথা নিয়েও ৬১ করেছিলাম।”
“উইলোর উইল”: বিলকুল ঠিক। এর চেয়ে বড় সত্যি হয় না। ওই ৬১-র কারনেই ঋদ্ধিকে সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল আবার। চোট বা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রান পাওয়ার জন্য নয়, শুধুমাত্র ৩৮ বছরের অজুহাতটা খানিকটা ফ্যাকাশে লাগছে।
ঋদ্ধি আরও বলেছেন “এই কয়েকদিনে বয়স বেড়ে গেল”?
“উইলোর উইল”: দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না। বেঁড়ে ব্যাটাকে ধরার মতো নির্বাচকরা ৩৮ বছর বয়সকেই বেশী গুরুত্ব দিলেন। এটা ঘটনা যে ভারতীয় দলে ঋদ্ধির বয়স সবচেয়ে বেশি এবং আশ্চর্যজনকভাবে ঋদ্ধিই অন্যতম ফিট! চেতন শর্মাদের কাছে এই তথ্যটা নেই?
ঋদ্ধি বলছেন “আমাকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে হয়তো দেখে নিতে চান নির্বাচকরা”
“উইলোর উইল”: সাহি জবাব, সাহি নিশানা। শ্রীকর ভরতকে সুযোগ দিতে চাইছে ভারতীয় দল। যদিও শ্রীযুক্ত ভরতবাবু এখনও পুরোপুরি তৈরি নন। এক্ষেত্রে ঋদ্ধিকে দলে রেখে ভরতকে তৈরি করে নেওয়া উচিত ছিল। নিজের চোখে দেখা কীভাবে ঋষভ পন্থকে তৈরি হতে সাহায্য করে গেছেন ঋদ্ধি। এখন তো মনে হচ্ছে ঋষভ ছাত্র হয়ে ঢুকে যেন শিক্ষক হয়ে বেরিয়ে গেলেন।
“বাংলা নক আউটে উঠলে আমি রঞ্জি খেলতে পারি”
“উইলোর উইল”: এই বোধোদয় শুভ। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা সহ অন্যান্য নির্বাচকদের পারফরম্যান্স দিয়ে লজ্জায় ফেলার জন্য এটাই সেরা ভাবনা। কাম অন, ঋদ্ধি। কোনদিন কোন বক্তব্য রাখেননি, আর এখন এমন স্টেপ আউট করেছেন যে কেঁপে গেছে ভারতীয় ক্রিকেট মহল। চাই কিপিং গ্লাভস এবং ব্যাট হাতে আপনি ঝলসে উঠুন। জানি আপনার প্রমাণ করার কিছু নেই। তবুও একবার আমাদের জন্য রুখে দাঁড়ান। আপনি পারবেন, অবশ্যই পারবেন। এই বিশ্বাস আমার আছে।