একটু অবাক হয়েছিলাম! রোহিত শর্মার মন্তব্যের ৭২ঘন্টা পরেও হিসেব করতে অসুবিধে হচ্ছে। ভারত অধিনায়ক এমন একটা কথা বলতে পারলেন? যতবারই রোহিতের এই মন্তব্যটি শুনছি প্রতিবারই মনে হচ্ছে রোহিত এটা কী করে বললেন?
রাজনৈতিক নেতারা সংবাদমাধ্যমকে যেভাবে পাঞ্চিং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন, অনেকটা সেই পথেই রোহিতকে হাঁটতে দেখা গেল। বিরাট কোহলি নাকি রান পাচ্ছেন না মিডিয়ার কারনে। আপনারা সবাই দেখেছেন এবং পড়েছেন। এখন এটা নিয়ে নেটিজনেরা কী ভাবছেন সেটা জানার আগ্রহ আমার নেই। কারণ অধিকাংশের লেখা এবং বক্তব্য শুনে মনে হয় এঁরা সুনীল গাভাসকার বা মাইকেল হোল্ডিং এর থেকেও বড় বিচারক। বন্ধের দিনে কলকাতার রাস্তায় যেমন ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা হয়, নেটিজনরা সেভাবেই কখনও ফুটবল, কখনও কুস্তি, কখনও টেনিস বা অধুনাপ্রচলিত লে পাঙ্গা খেলে যাচ্ছেন, একদম ফ্রি। আপাতত উইলোর উইলের হয়ে রোহিত শর্মার কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, কোহলির হয়ে মিডিয়া কি ২২গজে ব্যাট করতে যাচ্ছে?
লেজুড় প্রসঙ্গ, দুর্দান্ত ব্যাটার কোহলি কি মিডিয়ার কথা ভেবে ইনিংসের পর ইনিংস নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসছেন? ইডেনে প্রথম টি২০ ম্যাচে আ্যলেনের বলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসার পেছনেও কি প্রচারমাধ্যম দায়ী? মিডিয়া কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বোলিং করতে নেমেছিল?
মানেটা কী রোহিত? যা বলেছিলেন তার অন্তর্নিহিত দাঁড়ায় এরকম: বিরাট কোহলি বোল্ড মিডিয়া, কট মিডিয়া, এলবিডব্লিউ মিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। অধিনায়ক হিসেবে আপনি একজন বিখ্যাত ব্যাটারের পাশে দাঁড়াবেন, এ তো ভাল কথা। কিন্তু কারও মনোবল বাড়াতে গিয়ে অন্য এক নিরপেক্ষ মঞ্চে থাকা কর্মীদলকে আক্রমন করবেন কেন? বিরাটের মত একজন ব্যাটার চাপে পড়ে যাচ্ছেন -এটা ভাবতে খারাপ লাগছে। আমরাও তো চাই বিরাট কোহলি আবার বড় রানে ফিরুন। কিন্তু এই ব্যাপারে মিডিয়ার কোন ভূমিকা নেই। এটা নিশ্চয়ই কেউ বলতে চাইছেন না যে বিরাট ১৭ রান করলে পরেরদিন আমরা যেন ৭১ লিখি।
শুরুটা করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। যিনি অমিতাভ বচ্চনের ফোন ধরেননি তিনি খামোখা কেন মিডিয়াকে কৃতিত্ব দিতে যাবেন? মিডিয়ার সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় দুর্ব্যবহার করে যান ধোনি শেষ কবছর। যাওয়ার আগে এই রোগটা ব্যাটন পরিবর্তনের মত দিয়ে গিয়েছিলেন বিরাটের হাতে।
এই মুহূর্তে মনে পড়ে যাচ্ছে পৌনে তিন বছর আগের একটি ঘটনার কথা। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগের দিন ম্যাঞ্চেস্টারে নেট থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে কাতর কন্ঠে বলেছিলেন ‘মিডিয়া কি আমার অবসর দাবি করছে?’ বলেছিলাম ‘হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? কাউকে বলে যেমন আসেননি, কাউকে বলেও যাবেন না।’ উত্তরে বলেছিলেন ‘এই উত্তরটা কি ব্যবহার করতে পারি?’ মহেন্দ্র সিং ধোনি মিডিয়ার কাছে জানতে চাইছেন, যে এমন একটি মন্তব্য ধার করতে পারেন কি না! অবাক হয়েছিলাম! ঠিক একইভাবে রোহিত শর্মাকে বলে দিতে চাই যে অনুগ্রহ করে মিডিয়াকে পাঞ্চিং ব্যাগ বানাবেন না। তিনি বিরাট কোহলি, তার সাফল্যে আমরা উদ্বেলিত হই, ব্যর্থতায় উৎকন্ঠিত হই। যেটা কলমের কালি বা ভিডিও হয়ে সামনে আসে। মিডিয়া তার কাজ করে যাবে। এত বড় ব্যাটার যদি এতদিন ধরে ব্যর্থ হতেই থাকেন, তবে তাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হবেই। রোহিত গুরুনাথ শর্মাকে অনুরোধ, মিডিয়ার আলোচনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কোহলির পাশে দাঁড়াবেন না। বিরাট কোহলি রানে ফিরলে মিডিয়া হয়তো আপনার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হবে।