২০০৬-এর পয়লা ডিসেম্বর থেকে আজ অর্থাৎ চলতি টি২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ পর্যন্ত ভারত মোট ১৭১টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছে যার ভেতর ১৮টি অর্থাৎ দশ শতাংশের উপর ম্যাচ খেলেছে এই ২০২২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরের শেষে টি২০ বিশ্বকাপ শুরুর আগে এশিয়া কাপ সমেত আরও দশ-বারোটি ম্যাচ ভারত খেলবে। এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে বোর্ডের এক সূত্র থেকে জানা গেছে, বিশ্বকাপের প্রথম দলে যারা থাকবে বলে মোটামুটি নিশ্চিত তারা এশিয়া কাপের পর থেকে আর কোনরকম বিশ্রাম নিতে পারবে না। পুরো বিষয়টার মধ্যে উদ্দেশ্য একদম পরিষ্কার।
গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতা, তারপর কোচ-অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফ পরিবর্তন। একই সঙ্গে নতুন কোচ-অধিনায়ককে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে আইপিএল পরবর্তী সময়ে যথেষ্ট ম্যাচ দিয়ে দলটিকে গড়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া। আর ঠিক এই কাজটাই করে যাচ্ছে রোহিত-রাহুল জুটি। মোটামুটি বোর্ডের সূত্রকে যদি একটা প্যারামিটার হিসেবে ধরা হয়, তাহলে বলা যায় যে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ডের উদ্দেশ্য এশিয়া কাপ শুরু আগেই মোটামুটি বিশ্বকাপের দলটা গুছিয়ে নেওয়া এবং তারপর এশিয়া কাপ, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সেই দলটাকে খেলিয়ে সেট করে নেওয়া। পরিকল্পনায় কোন খামতি নেই।
আর এই পরিকল্পনারই অঙ্গ চলতি সিরিজ, বা গত সিরিজ। এই অবস্থায় দলের নিয়মিত কয়েকজন সদস্য না থাকার সুযোগটা পুরোদমে কাজে লাগাচ্ছে রহুল-রোহিত জুটি। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁরা যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেন, তো কবে গিয়ে করবেন? তার জন্য এখন যদি দুটো ম্যাচ হারতে হয় হোক, কিন্তু এই পরীক্ষাটা প্রয়োজনীয়। আবশ্যিক। বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে যদি শেষ ওভারে দশ রান ডিফেন্ড করতে হয়, কোন মতেই রোহিত, বুমরা বা ভুবি ছাড়া কারও কথা ভাববে না, কিন্তু এই প্রায় আপাত গুরুত্বহীন, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সিরিজে যদি একজন তরুণ খেলোয়াড়কে এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে না দেওয়া হয়, তবে আর কবে তারা সুযোগ পাবে? কবে পরিনত হবে?
একই কথা প্রযোজ্য সূর্যকুমারকে দিয়ে ওপেন করানোর ক্ষেত্রে। গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতার একটা বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল শুরুর তিন ব্যাটার, যাদের নাম – রোহিত, রাহুল, বিরাট। একই সঙ্গে এদের মধ্যে দুজন বর্তমানে অত্যন্ত চোটপ্রবন হয়ে পড়েছেন আর দুজন হারানো ফর্ম খুঁজছেন। এই অবস্থায় একজনকে মিডল অর্ডার থেকে তুলে নিয়ে এসে ওপেনার হিসেবে চেষ্টা করার মধ্যে দোষ কোথায়? সমর্থকদের ইচ্ছে নিশ্চয়ই শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ জেতা নয়, সঙ্গে বিশ্বকাপটাও জেতা।
খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সৌরভ গাঙ্গুলি বহুবার রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে একটা কথা বলে থাকেন। রাহুল তাঁর দেখা সবচেয়ে ‘মেথডিক্যাল’ খেলোয়াড়। আর সঙ্গে আছেন রোহিত, যিনি অধিনায়ক হিসেবে ইতিমধ্যেই এই ফরম্যাটে তাঁর দক্ষতার পরিচয় তিনি দিয়েছেন।
তাই বলি এখনই সমালোচনার নখ-দাঁত বের করবেন না। আরও সময় এবং সুযোগ এঁদের প্রাপ্য। তাঁরা যেভাবে পরিকল্পনা করে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে এগোচ্ছেন, এগোতে দিন। সমলাচনায় বিদ্ধ করার জন্য বহু সময় পড়ে আছে। কিন্তু এটা আদর্শ সময় নয়। এই সিরিজগুলোর মতো ঘর গুছিয়ে নেওয়ার সিরিজ খুব একটা আসবে না, আর বিশ্বকাপের দল গুছিয়ে নেওয়ার জন্য এটাই কিন্তু শেষ সিরিজ।