জামশেদজির কথাটা উঠেই পড়েছে যেখানে (এবং সিকে নাইডু ও লাধা রামজির জন্মসনগুলিও হয়েই গিয়েছে আমাদের জানা), বলে রাখি তিনশো তিনের ভিড়ে দুশো নিরানব্বইয়েরই জন্ম গোটা বিংশ শতাব্দীটা জুড়ে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকের আলো দেখা মাত্র চার ভারতীয় পুরুষের সুযোগ হয়েছিল সাদা পোশাকে দেশের প্রতিনিধিত্বের। তিনের নামধাম তো ইতিমধ্যেই জানা হয়ে গিয়েছে আমাদের। চতুর্থ মানুষটি হলেন ১৯৩৬ ইংল্যান্ড সফরে ২ টেস্ট খেলা কেমব্রিজ শিক্ষিত মাদ্রাজি মিডল-অর্ডার ব্যাটার কোটার রামস্বামী। এঁর জন্ম জুন ১৬, ১৮৯৬-এ মাদ্রাজে। বিশেষ ভাবে বলার কথাটা হল, ভদ্রলোকের মৃত্যুর তারিখটি আজও অজানা। ঊননব্বই বছর বয়সে পরিবারের বোঝা হয়ে আর জীবনধারণ করতে না চেয়ে মানুষটি বেরিয়ে যান নিজের মাদ্রাজের বাড়ি থেকে। আর কখনও হদিস মেলেনি তাঁর।
তিনশো তিনের ভিড়েই খোঁজ মেলে এমন দু’জনের যাঁরা অন্য কোনও খেলাতেও প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দেশের। একজন এক্ষুনি আলোচিত রামস্বামী। ১৯২২ ডেভিস কাপে যিনি খেলেছিলেন ডাবলস পর্যায়ের দু’টি ম্যাচ। এই বিরল প্রজাতির দ্বিতীয় সদস্যটি হলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৩৩-৩৪ কলকাতা টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৩১) খেলা মাদ্রাজি অলরাউন্ডার জয়সাম গোপালন (জন্ম জুন ৬, ১৯০৯-এ মোরাপ্পাকমে)। সেন্টার হাফ হিসেবে যিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন জাতীয় হকি দলেরও। তবে ক্রিকেট প্রেমের মাশুল ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকের নিশ্চিত স্বর্ণপদকের মূল্যে চোকাতে হয়েছিল মানুষটাকে। যেহেতু অলিম্পিকের জন্য জাতীয় দলে ডাক পেয়েও ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজার নেতৃত্বে ১৯৩৬-এর কুখ্যাত সেই ইংল্যান্ড সফরকেই বেছে নিয়েছিলেন গোপালন।
বলে রাখি, দীর্ঘ একষট্টি ও ঊনআশি বছরের ফারাকে গোপালনের জন্মদিনে পৃথিবীর আলো দেখা তিনশো তিনের আরও দুই প্রতিনিধির।
জুন ৬, ১৯৭০। গদগে জন্ম ১৯৯৬ থেকে ২০০০-০১ অধ্যায়ে ১৫ টেস্ট খেলা কর্ণাটকি অর্থোডক্স সুনীল যোশির।
জুন ৬, ১৯৮৮। অশ্বি খুর্দে জন্ম এই নিবন্ধটি রচনার মুহূর্ত অবধি ৮২ টেস্ট খেলা মুম্বইকর মিডল-অর্ডার ব্যাটার অজিঙ্ক রাহানের।
মরশুম ১৯৩৬। সেবারের ইংল্যান্ড সফর সম্পর্কে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই এখানে। সেই এক সফরেই যা কলঙ্ক জমা হয় ভারতীয় ক্রিকেটে, তার তুলনা অতিবিরল। পোরবন্দরের মহারাজা বা লিম্বডির যুবরাজের অন্তত যে বুদ্ধিটুকু ছিল, টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার মোহে সেটুকু বিসর্জনেও দ্বিধা করেননি সেবারের সফরের অধিনায়ক ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা বিজয় আনন্দ। ঘটনা হল স্রেফ এই মোহটুকু জয় করতে পারলেই হয়তো প্রথম যুগের ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকের পরিচয়ে ইতিহাসে বেশ সুনামই অর্জন করতে পারতেন ভিজি নামে বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) এই মানুষটি। ডিসেম্বর ২৮, ১৯০৫-এ তৎকালীন বেনারসে (অধুনা বারাণসী) জন্ম দেশের হয়ে ৩ টেস্ট খেলা ভিজির।
এই সফরের একটি ঘটনা আজও ফেরে ক্রিকেট অনুরাগীদের মুখে মুখে। ওভালে সফরের চূড়ান্ত টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৫৪) আগে প্রাতরাশের টেবিলে মিডিয়াম পেসার বাকা জিলানির মুখরোচক ভাষায় ছড়া কেটে স্কোয়াডের বর্ষীয়ান সদস্য একদা ভারত অধিনায়ক সিকে নাইডুকে অপমান করা। বহুতর ক্রিকেট ঐতিহাসিকের মতেই উক্ত ঘটনাটিই ওভালে টেস্ট ক্যাপ দেয় বাকা জিলানিকে (জন্ম জুলাই ২০, ১৯১১ জলন্ধরে)। নাইডুকে যেহেতু একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না ভিজি।
জুলাই ২০, ১৯৭৬। ভুবনেশ্বরে জন্ম নয়ের দশকের শেষপর্বে ২ টেস্ট খেলা ওড়িয়া পেসার দেবাশিস মোহান্তির।
জুলাই ২০, ১৯৮৩। উজ্জয়িনীতে জন্ম ২০১৫ কলম্বো (সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২,১৭৯) খেলা মধ্যপ্রদেশীয় উইকেটরক্ষক নমন ওঝার।
মরশুম ১৯৪৭-৪৮। লালা অমরনাথের অধিনায়কত্বে দেশীয় ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। দু’ মাসের কম সময়ের ফারাকে ইন্ডিয়া ক্যাপ পাওয়া যথাক্রমে ৫ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার গোগুমাল কিষেনচাঁদ (জন্ম এপ্রিল ১৪, ১৯২৫ অবিভক্ত ভারতবর্ষের করাচিতে) ও ৪ টেস্ট খেলা পেসার কমান্দুর রঙ্গচারীর (জন্ম এপ্রিল ১৪, ১৯১৬ মামান্দুরে)। যথাক্রমে ব্রিসবেনে প্রথম (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৯০) ও অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৯৪)। একই তারিখে ভূমিষ্ঠ দুই ভারতীয় পুরুষের একই সফর থেকে টেস্ট ক্যাপ অর্জনের এমন অত্যদ্ভুত দৃষ্টান্ত আর দ্বিতীয়টি মেলে না।
আর কারা টেস্ট ক্যাপ পেয়েছিলেন সেবার অস্ট্রেলিয়ায়?
প্রবীর সেন ও আমির ইলাহির নাম তো আগেই এসেছে এই নিবন্ধে। হেমু অধিকারী, জামশেদ ইরানি ও দাত্তু ফাদকারের কথায় পরে আসছি আমরা। বোম্বে, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও অধুনালুপ্ত হোলকারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দেওয়া (ব্যাটিং গড় ৪১.৮৩) ন্যাটা মিডল-অর্ডার ব্যাটার খাণ্ডু রঙ্গনেকার (জন্ম জুন ২৭, ১৯১৭ বোম্বেতে) ৩-টি টেস্ট খেলেন সেই সফরে। পক্ষান্তরে ঘরোয়া স্তরে সার্ভিসেস, দক্ষিণ পাঞ্জাব (অধুনালুপ্ত) ও পাটিয়ালার মহারাজার একাদশের প্রতিনিধিত্ব করা পাঞ্জাবি মিডল-অর্ডার ব্যাটার কানওয়ার রাই সিং (জন্ম ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯২২ দারকাটিতে) খেলেছিলেন মেলবোর্ন টেস্টটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৯২)।